*১) একটা দিন*
জানলায় যখন সূর্যের প্রথম আলো পড়ে
একটা নতুন দিন যখন জানান দেয় তার জন্মের খবর
আমি বুঝতে পারিনা সুখ উদযাপন করব না দু:খ
যখন দিনের প্রথম শ্বাস ভরসা দেয়, বলে বোধনের খবর
যখন ফুসফুসে প্রথম বাতাস নিই রাতভোর হলে
আমি বুঝতে পারিনা আলো উদযাপন করব না অন্ধকার
দিনের শেষে মৃত বিকেল এসে যখন দাহন ছুঁয়ে বসে
ক্ষয়াটে রোদের ভিতর যখন অহেতুক বিলাপ দেখি
আমি বুঝতে পারিনা আনন্দ উদযাপন করব না শোক
একটা নিরাপদ দিন যখন নদীর গন্ধ নিয়ে আসে
ক্রমাগত যখন সেটুকু তারাবাতির মতো জ্বলে
আমি বুঝতে পারিনা জীবন উদযাপন করব না ভয়
সন্ধের গায়ে গার্হস্থ্যস্বপ্নেরা যখন একে একে এসে বসে
জ্যোৎস্নাঢালা চরায় যখন ঋতুমতি কাল এসে ডাকে
আমি বুঝতে পারিনা আরণ্যআলো নেবো না অমানিশা
যখন আকন্ঠ ডুবে থাকি অসংখ্য ভিড়ের মিছিলে
যখন অভ্যাসে রোজ বাড়ে শোকের ভিতর শূন্যের বাস
আমি বুঝতে পারিনা স্বস্তিতে থাকব না শূন্যতা।
*২) হিসেব মেলেনি*
হিসেব মেলেনি কে কাকে অতিক্রম করে গিয়েছিল
বিমোহ দিশার খোঁজে বৃত্তচ্যুত কে হয়েছিল অক্ষরেখা থেকে
নির্বাণ শোক প্রথমে কে পেয়েছিল
হিসেব মেলেনি খন্ডিত সখ্যে কে থেকেছিল
সূর্যাস্তের সঙ্গে লেগে থাকা মৃত আলো কার ছিল
রক্তকণিকায় প্রথম স্রোত বদল কার হয়েছিল
কার কাছে এসেছিল বেগবতী ঋতুকাল
সহস্র ধমনী জুড়ে কে নিয়েছিল সবটুকু নির্যাস গ্রহণের
আরণ্য আলোর দিকে কে গিয়েছিল কাকে ছেড়ে
মোহবাতাসে অক্ষমতা ছিল কার কতটুকু
অস্থিত আঘাতের দাগ দিয়েছি কে কাকে কতটা
শূন্য গলিপথে তীব্র দাহনে কে হেঁটেছি কতদূর
হিসেব মেলেনি এমন কত গ্রার্হস্থ্যস্বপ্নের
হিসেব মেলেনি কে পরোক্ষে গ্রহান্তর চেয়েছিল
অথবা কে পেয়েছিল অহেতুক কিছু স্ফটিক আলোর বাস্প।
*৩) খড়কুটো একদিন*
বাতাস জুড়ে মোহর মতো খড়কুটো একদিন
স্পর্শসুখের মায়ার মতো সেসব অবাধ ঋণ
বেঁচে থাকার ছায়া শুধু আশ্রিত এক ঘর
দু এক পা চলতে গিয়ে অগাধ বালির চর
আস্তে আস্তে ভুলছি রাস্তা ভুলছি অলিগলি
সেসব পথে নুড়ি পাথর তুই যেখানে ছিলি
মোড়ের মাথায় গল্পগাছা সন্ধে নামছে ঘাসে
সেসব দিনের গায়ে এখন নোনা বৃতি ভাসে
সেদিন মনে অনেক কথা আকাশ খুঁজে মরে
পায়ে পায়ে ওপার থেকে অশ্বরশ্মি আসে
তোর কাছে থাক বিকেলগুলো মুহূর্তদের মাঝে
সময়মতো চেয়ে নেব বর্ষাবিলাস এলে
এখন ওসব ছাইরঙা এক তুষারকঠিন স্তর
এখন ওসব ছেঁড়া মনের নষ্ট মারুত ঝড়
তোর কাছে থাক আমার দেওয়া অশ্বমেধের ঘোড়া
সেদিন ছিল পূর্ণিমারাত জ্যোৎস্না রঙে মোড়া
এখন শুধু সহজ করে নিঝুম দিনে বলা
অনেক রাতের শেষে এখন দ্বিখন্ডিত বাঁচা
চাঁদ উঠলে আখতারিবাঈ গজল নিয়ে আসে
বুকের ভিতর উষ্ণ কিছু রোদের মতো জ্বলে।
*৪)*
*ক)*
গত জন্মের শোধ
হিসেব মিলবেনা জানি
নদীর মোহ আকাশ জানে
অনু পরমানু জুড়ে গভীর ক্ষত
যেন এক শতকের গুনাহ।
*খ)*
রাত নামছে সমে বিনিময় শেষে
অন্ধকারে নতুন বৃষ্টির সোঁদা গন্ধ
মৃত নক্ষত্রদের বেহস্ত যাবার সময়
ইহজীবনের শরীর জুড়ে একশ আঘাত
ওরা তাকে শপথ বলে।
*গ)*
শহর হাঁটছে শোকার্ত রাতে
উৎসব শেষে দীর্ঘক্লান্তিভারে
শহুরে হাওয়ায় হিম পড়ার শব্দ
মেঘেরা ঘুমোলে কান্নাদল আসে
মহামারী শেষে।
*ঘ)*
ব্যালকনি জুড়ে শৈশব
ষোড়শী ফাগুনের গায়ে সন্ধের স্নান
কোজাগরী চাঁদ শুকোলে
পরজন্ম ঠিকানা খোঁজে
ওদের কাছে সেটাই গন্তব্য।
*ঙ)*
অনন্ত স্বপ্নেরা এখন
মাতনবাঁশির সুরে হাঁটছে
মফস্বলী নদী জানে
সে এখন পালকমাতা
বোধন এলে তাকে গার্হস্থ্যসুখ বলে।
*চ)*
পড়ন্ত জীবনের গায়ে
গলিজ শ্যাওলাধরা অস্তি
রক্তকণিকায় ঘূণ ধরায় ভরা সুখ
বাকিটুকু অপচয়, ঋণশূন্য
ঘন অন্ধকারে তাকে নষ্টসময় বলে।
*ছ)*
আরও কতদূর হেঁটে চলা
আরও কতো অভ্যাসে ছুঁয়ে থাকা?
বৃত্তরেখায় ভাসে এমন কিছু অবোধ্য প্রশ্ন
মোহনার তিনদিক জুড়ে ঝড়ো বাতাসে
যখন খানিকটা শূন্য অতীতবাস পড়ে থাকে।
*৫) দাগ*
কিছু অজুহাত এভাবেও দেওয়া যায়
কিছু দাগ যেমন থেকে যায় ডাকনামের গায়ে
সম্পর্কের সঙ্গে রেখাপাতগুলো কখনও ফিরে আসে
পায়ে পায়ে নিযুত বসন্ত পেরিয়ে
বারান্দা জুড়ে হলুদ রোদ নেমেছিল খুব ভোরে
রোদের ভিতর অনাশ্রিত সাত রঙ ঘোরে
ওরা আগেও ছিল নিয়মমত
বর্ণমালা ভেঙে শুধু দেখতে পাইনি
চৌকাঠে দ্বিধায় দাঁড়িয়ে থাকে কিছু অত্যয়
কিছু দায় এভাবেও ফিরে যায়
বাকি সব অপচয় সেটুকু পাতালঘরে বন্দী থাকে
এখন সময়ের গায়ে নতুন আমন ধানের গন্ধ।
*৬) ভুল গন্তব্য*
শব্দেরা কোথাও পৌঁছতে চেয়েছিল
বর্ণমালা ভেঙে চৌরাস্তার কোন এক দিকে
স্বভাবমতো এগিয়েছিলাম নিয়মবিরুদ্ধ পথে
বিপরীত স্রোতেও একই উত্তরপুরুষে ছিলাম
যেমন সচরাচর করে থাকি অভ্যাসমতো
প্রচ্ছন্ন নিয়মতন্ত্রের শাসন উপেক্ষা করে
যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে প্রত্যাখান করেছি সমস্ত দায়
অকারণ আনুগত্যে থাকবনা বলে
তারপর নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে অভিমুখ খুঁজেছি
অন্ধকারে এভাবেই ছুঁয়ে থাকে ভয়
এসব রয়ে যাওয়া কিছু অতিক্রান্ত সময়
প্রতি রাতের শেষ প্রহরে রোজ ওরা আসে
আলোকবর্তিকার সবগুলো তারাপথ চেনায়
তারপর শপথ ভেঙে একদিন অভ্যস্ত পথে চলে যায়
ভুল গন্তব্যে দাঁড়িয়ে থাকি তারপরেও
রাতভর দাহকাল আসে এভাবে ক্রমান্বয়ে
রাতভর নদী ডাকে পারে
অধীনতার অনুপাত যেখানে শূন্য হয়
জানলায় পড়ে থাকা চাঁদরেনুগুলো কুড়োই
গেলো বসন্তে ওরাই তো ছিল সঙ্গে।
*৭) ভাবিনি কখনও*
ভাবিনি কখনও ভুলের ভিতর বিপন্নবাস
ক্রমশ সহজ হবে দীর্ঘ মরুপথের শেষে
একদিন নিতান্ত কিছু অচ্ছদ অবসর আসবে
অভ্যাসবশত কুড়োন খানিক খড়কুটো অবহেলায়
চৌকাঠে পড়ে থাকবে কুশল বিনিময়
নিরাপদ শ্বাসের মতো
ভাবিনি কয়েক পশলা বৃষ্টি
দূরত্বের ওপারে চলে যাবে জলজ ছায়ায়
ভাবিনি ক্রমান্বয়ে হাওয়ায় উড়বে
জলাশয়ে পড়ে থাকা ব্যক্তিগত অন্ধকার
শোকশূন্য এক আলোকবর্তিকায়
উপকন্ঠে ভাসবে পুণ্যেরা সব আয়োজন শেষে
ভাবিনি নিতান্ত খড়কুটোর মতো
শহুরে স্বপ্নেরা ভাসবে, অবক্ষয় পেরিয়ে
এসে দাঁড়াবে মিথ্যে দাহকাল নিয়ে
খোলা আকাশের নীচে একা আর
ঝড়ের মাথায় উড়বে পুণ্যেরা
বৃত্তচ্যুত অক্ষরেখায় কোন একদিন।
*৮) তোমাকে চিনতাম সেদিন*
যখন চিনার গাছের পাতায় শ্রাবণ আসত
অভগ্ন অবিচ্ছিন্ন সমগ্র তোমাকে,
খানিকটা জড়িত অনেকটাই সহজ
যতটা পথ পেরিয়ে এলে চেনা যায়
তারপর ততটাই হেঁটেছি
ক্রদ্ধ রোদ, বৃষ্টি, শীতে
এরপর প্রতিটা ঋতুকালীন তারাপথে
জ্যোৎস্নায় তোমার অশ্রেয় রঙ দেখেছি
অতিক্রম করেছি সব ব্যক্তিগত মেরুবলয়
দুব্বোঘাসের গায়ে লেগে থাকা শিশিরকণায়
এখন আমাদের রঙহীন অসাড় বাস
এখন তোমাকে অচেনা লাগে
ভগ্ন বিচ্ছিন্ন অস্পষ্ট নির্বাক শোকের মতো।
*৯)*
ভাঙা কিছু সময় ভাসে ইতস্তত
ওরা সহজ কিন্তু স্বচ্ছ নয়
আলগা কিন্তু বাঁধন চায়
সন্ধের গায়ে সাঁজতারা খোঁজে
আর বাতাসের গায়ে মোহগন্ধ
সাদা দেওয়াল জুড়ে পড়ে ব্যক্তিগত দৈন্য
ওরা শব্দহীন কিন্তু শোকশূন্য নয়
নিরাপদ দূরত্বে থাকে অহেতুক
সর্বস্ব দিতে গিয়ে নির্বাসনে যায়
ওরা আলগা কিন্তু স্পষ্ট জীবন চায়
*১০) মোহ*
বাতাসে আত্মসুখ ভেবে যে হাওয়ায় আদ্যন্ত ভাসি রোজ
এটাই অন্তিম সুখ ভেবে যে সময়ের গলিতে হাঁটি রোজ
এসবই গভীরতার তল খুঁজতে থাকা
ভিনদেশী কিছু মোহ
অবাধ উষ্ণতায় যে তৃষ্ণার্ত রোদ্দুর গায়ে মাখছি রোজ
যে ঋতুমতী কাল ক্রমশ ভরা অন্ধকারে জড়ো হয় রোজ
এসবই ভুল গন্তব্যে চলা
মায়াবী কিছু বশীকরণ
প্রত্যাখ্যাত কষ্টগুলো যেভাবে জড়িয়ে রাখে রোজ
মুহূর্তরা যেভাবে আসে পাতালপ্রবেশের সন্ধিক্ষণে রোজ
এসবই পারস্পরিক দেওয়া নেওয়া শেষে
দীর্ঘ কিছু বায়বীয় স্বপ্ন
উপবাস ভেঙে যে কৃষ্ণবর্ণ মেঘ নীচে এসে বৃষ্টিস্নাত হয় রোজ
যে প্রাচীরসম ঢেউ জড়িয়ে থাকে নিখাদ ভালোবাসায় রোজ
এসবই অজ্ঞাতবাসে যাবার আগে
বিবর্ণ এক অশরীরি বোধ।
0 মন্তব্যসমূহ