Ad Code

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

আবু রাইহান

 



নদীর কাছে জলজ ছায়ায়


*১*

এখন রাত্রি নিবিড় হলে 

উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে প্রিয় এক নদী 

অনর্থক কথোপকথনে রাত্রি করি পার 

গাঢ় ঘুমে ভারী হয়ে থাকে চক্ষু তাহার 

অব্যক্ত দুঃখের কথা বলতে চেয়েও 

কেন যে থেমে যায় বারবার 

হায় নদী- 

কেন এত প্রগাঢ় বেদনার ভার,  

তোমার জলজ ছায়ায় ভেসে যাওয়ার 

অনুমতি পেতাম যদি!

মায়াময় রাত্রি শুধু মিলিয়ে দেয় 

স্পর্শের বাইরে থাকা দূরত্বের এপার ওপার!


*২*

নদীর বিম্বিত অশ্রু প্রতিশ্রুতি হয়ে জেগে থাকে হৃদয় দর্পণে 

আমাকে উন্মুখ করে রাখে তার হৃদয় স্পন্দিত টলটলে ঢেউ 

রহস্যময় আভরণ ঝরে যায় লোভনীয় স্রোতের চুম্বনে  

এসেছি জলজ ছায়ায় তৃষ্ণার্ত তটভূমি থেকে 

প্রতিধ্বনির গর্জন থেমে গেলে বিস্তৃত সৈকত জুড়ে 

সে জেগে বসে থাকে শরীরে নিশিকাজল এঁকে 

একাকী রাত্রি ফুরিয়ে গেলেও 

অনিঃশেষ হয়ে পড়ে থাকে শুধু বৃষ্টি ভেজা দিন!


*৩*

তরঙ্গায়িত হয়ে ভেসে চলেছি জলতলে 

           তোমার আলোকিত আহবানে 

নদী হে তুমি কি খুঁজে পেলে শূন্যতার মানে? 

হিরন তারার সাথে গল্প করো রাত ভরে 

পাথুরে স্তব্ধতায়,মন্থর স্বচ্ছতায় হেঁটে যাও 

             একাকিত্বের অহংকারে 

রমনীয় সেই রৌদ্রবেলা পড়েনি তো ঢলে 

এখনও মুখখানি ভাষমান মায়াবী জলে!


*৪*

কিছুতেই যেন কাটতে চায়না অপেক্ষার প্রহর 

এসব দগ্ধ যন্ত্রনার কথা জানে কেবল নির্জন ঘর!

এখন শ্রাবন মাস--

গাছেদেরও শরীর জুড়ে সজীবতার আশ্বাস, 

শুধু আমার জন্যে পুঞ্জিভূত নিয়তি নির্ধারিত  দীর্ঘশ্বাস!

তবুও ভালো থেকো প্রিয় নদী 

এজীবনে আবারও কোনোদিন দেখা হয় যদি!

হায় যাপিত জীবন! রোদ বৃষ্টির খেলা 

ভাবনার আশ্লেষেই বয়ে গেল বেলা!


*৫*

অপেক্ষার নির্জন প্রহরে রাত্রি করি ক্ষয়

ক্রমাগত অন্ধকার নেমে এলে নদী তখন মায়াময়!

নিবিড় রাত্রিতে নদী বয়ে আনে বসন্ত বাতাস

সহনক্ষম হয় বেদনা, ঝরে পড়ে স্তব্ধ হা-হুতাশ!

স্বপ্নে জ্বলে ওঠা হে আমার হিরণ্যমুখ 

কল্পনার চুম্বনে খুঁজি রমণীয় সব সুখ

যদিও জানি বন্ধ রেখেছ কৌমঘরের সব দ্বার 

তবুও নিষ্ফলা শয্যা পেতেছি প্রতীক্ষায় তোমার!

নিঃশব্দ রাত্রির একাকী প্রেমিক আমি

তরঙ্গায়িত হয়েছি স্থিতধী নদীর টানে 

বহুব্যাপ্ত শূন্যতায় খুঁজি তোমার শান্ত আক্রোশের মানে!


*৬*

নদী হে নোনাজলেই তো তোমার আবাস 

সমস্ত অভিমান রেখে দাও জারিত অশ্রুতে 

আর আত্মহননের ভাষা ছড়াও বিষন্ন বৃক্ষতলে

বর্ষাপীড়িত দিনে আমাকে ভাসাও অনাহত বৃষ্টি জলে!

 

আমাকে শূণ্যতায় সমর্পণ করে, 

                             নিজেও তো বিপর্যস্ত হও উৎকণ্ঠায় 

নিকটে এসেও বারে বারে নিভিয়ে দাও   

                  তর্পনের সব অভিপ্রায়!


তোমাকেই তো অর্পণ করেছি  আমার সকল শূন্যতা 

তোমার দর্পণে কেন প্রতিবিম্বিত হয়না এই সত্যতা!


*৭*

একলা জাগি জ্বরের ঘোরে রাত 

তুমি রাঁধছো ওভেনে গরম ভাত 

কপাল ভিজছে পট্টি দেওয়া জলে

নিবিড় রাতে সেই যে পথে হারালে!


কূলহারা এই বিরহীর এখন ভীষণ জ্বালা 

অভিমানে ভাঙ্গছ তুমি সম্পর্কের ডালপালা!

রাত বিরোতে এলেই না হয় দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে

ঠিকানাবিহীন নাবিক আমি নোঙ্গর ফেলেছি অকূলে!


তুমি তো জানো আমার গতি কোন দিকে ধাবমান

নিরর্থক স্বপ্নের যন্ত্রণা ভুলতে ব্যর্থতার সমুদ্রে স্নান!


*৮*

প্রবল জলোচ্ছাসে শুনি নদীর নিঃশ্বাসের স্বর 

শরীরে বাতাস হামি খায় উষ্ণতার আহ্লাদে 

রমণীয় স্রোতের টান জলজ গিরিখাদে

আর সিক্ত আঁচলে ঢাকা রহস্যময় অক্ষর!


নদী তোমার কাছে পাই কাঙ্খিত জলজ হাওয়া 

আহা দীর্ঘশ্বাসের সেসব দিনলিপি ভুলে যাওয়া 

পড়েছে উজানী আলো নদীর ঢেউ তোলা গালে

মায়াময় লাগে বিবশ সন্ধ্যায় বর্ণময় বিদায় কালে!


হে প্রিয় নদী আমাদের দুজনেরই তো পছন্দ রাতের নির্জনতা 

আবছায়া হয়ে আসা অতীত, 

             আর ভবিষ্যতে প্রসারিত স্পর্শের উষ্ণতা! 


*৯*

প্রদোষ গোধূলিলগ্নে বসেছিলাম নদীর ঘনিষ্ঠ উষ্ণতায় 

আকাঙ্ক্ষাময় দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলাম স্থির মগ্নতায়  

ভালবাসার আঁচল জুড়ে ছিল কেবল মুগ্ধতার স্বর 

হায় হঠাৎ সান্ধ্য ভাষ্যপাঠে শেষ  অতৃপ্ত প্রনয়ের প্রহর !


 আমি এখন বন্ধ ঘরে বিষন্ন এক ঢেউ 

বুকের মধ্যে ছলাৎ ধ্বনি, বুঝলে তুমি কই

অশান্ত হৃদয় খুঁজে বেড়ায় তোমার বুকের তল

 তুমি আমার রূপনারায়ন, চর ভাসানো জল!


মন পবনের নাউয়ের পালে প্রবল ঝোড়ো হাওয়া

স্রোতের জলে ভাসতে ভাসতে নদীর কাছে যাওয়া!


*১০*

তোমার অসহায় অশ্রু ক্ষরণ আমাকে ঠেলে দেয় শূন্যতার তারল্যের বুকে 

এতদিন তোমার স্পর্শের বাইরে থেকে আমিও তো

                                                   হেঁটেছি কেবল ধূসর শূন্যতার দিকে!


তরঙ্গায়িত সমুদ্র অতিক্রম করে পেয়েছি কাঙ্খিত নদীর দেখা

যার মায়াবী ঢেউয়ের আড়ালে টানা আছে অদৃশ্য লক্ষণরেখা! 


মৌসুমী হাওয়ায় ভাসমান বিবর্ণ সময় 

             সিক্ত সৌরভ রেণু ঝরাতে পারো অনায়াসে

একদিন এই আমি হয়ে যাব প্রত্নতত্ত্বের বিষয় 

                                     সেদিন পাবেনা  খুঁজে জলজ ছায়ার আশেপাশে!


*১১*

নদী তোমাকে দিয়েছি পুরনো দিনলিপি 

তাতে কি আর আছে নতুন কোন কথা 

হৃদয় উজাড় করে তোমাকে যে কিছু দেবো 

অমনি ঝরে যায় ভালবাসার  আঁজলাটা!


হৃদয় জুড়ে ছড়িয়ে ছিল ভালোবাসার ডালি 

এখন শুধু রক্তক্ষরণ, বুকের খাঁচা খালি

বৃষ্টি ভেজা হাওয়ায় ভাসে পুরনো সেই ঘ্রাণ

ঘুমের থেকে জেগে ওঠে  ভালোবাসার প্রাণ!


আশা নিয়ে আড়াল করি ব্যর্থতার সব কালো 

করতলের ভেতর জ্বলে বিশুদ্ধতার আলো !


*১২*

জলজ ছায়ার শ্যামল উপশম 

জলের প্রলেপে মুছে যায়, জেনেছে এ হৃদয় 

তাই স্তব্ধ রাত্রিতে জমে আশঙ্কার কালো মেঘ 

তবুও লাবণ্যের শ্যামলী প্রান্তর ছুঁলে 

             কেঁপে ওঠে হৃদয়াবেগ!


তোমাকে স্পর্শ করে হৃদয় পেয়েছে নক্ষত্রের দীপ্তি

অব্যক্ত অনুভূতি মালা, সারাক্ষণ ভেতরে প্রবহমান 

                                                  গভীর পরিতৃপ্তি!


চোখের সামনে ওড়ে দ্রবীভূত শাড়ির সবুজ প্রান্ত  

স্নিগ্ধতর নদীর শ্যামল বৃত্ত জুড়ে কাঁপে নীলান্ত!


*১৩*

প্রিয় নদীর ছলাৎ ধ্বনি শুনবো বলে অপেক্ষাতে অপেক্ষাতে 

                                                              রাত্রি নেমে আসে 

ভাদ্রের খামখেয়ালি বৃষ্টিতে চারপাশ জুড়ে বৃষ্টি কণা ভাসে!

বিকেলের ধূসর বন্দরের শরীরজুড়ে এখন ডিজিটাল আলো 

নিঃশেষিত হওয়ার আগে মনে হয় 

             এসব লৌকিক বেদনা পাওয়া ভালো!

 পূবালী হাওয়ায় ওপারে উড়ে যায় 

                                               বৃষ্টিস্নাত গহীন ভালোবাসা

 দগ্ধ ডানায় নম্রতা ঢেকে রেখে 

                                   প্রিয় মননের কাছে শান্তি জলের  আশা!


*১৪*

মধ্য রাত পেরিয়ে আমার স্বরাঘাতে বিদীর্ণ হলে তুমি 

তোমার জারিত উষ্ণতায় গভীর ঘুম নেমে এল চোখে

ধূসর মস্তিষ্ক জুড়ে ছেয়ে আছে স্বপ্নীল ব্যাকুলতা 

নিস্পন্দ শূন্যতার মাঝে বসে তবুও আমি দূরগামী!


দূর দিগন্তে অলৌকিক জ্যোৎস্নায় মথিত 

                   আকাশ হয়েছে উজালা 

মন চাইছে নদী তোমার জলে সিক্ত হয়ে 

                                                    ভাসা-ডোবার খেলা!


প্রতিদিন প্রত্যুষে লেখা হোক নতুন ভালোবাসার কথা 

                                              চাইছে হৃদয়ের সবুজ পাতা 

ভালোবাসা জারিত নৈশ চুম্বনে  মুছে যাক তোমার 

                   অব্যক্ত যন্ত্রনা লেখা একাকিত্বের ধূসর খাতা!  

 

জাগরণের অপার আনন্দে শিহরিত নীলিমার অভ্যন্তর 

স্পর্শের অনুভবের বাইরে থেকেও রোমাঞ্চিত নির্জন ঘর!


*১৫*

ভালোবাসা এক অপার্থিব ভালোলাগার যন্ত্রণার নাম 

প্রিয় কণ্ঠস্বর শুনে জ্যোৎস্না প্লাবিত হয়ে ওঠা 

                এক অসুখী কিশোরের রাত্রির মধ্যযাম!


হে প্রিয় নদী আমার প্রেমের গল্পের শুরু 

                                          তোমার জলজ ছায়ায় 

আমার স্বপ্নতাড়িত বৃক্ষে ফুল ফুটেছে 

                                        তোমার রমণীয় মায়ায়!


তুমি হেসে উঠলেই সহনীয় লাগে বিপন্ন সময় 

নড়বড়ে আত্মবিশ্বাস থেকে ঝরে পড়ে 

                   একাকিত্বের ভয়!


তোমার ছোঁয়ায় প্রাণ পেয়েছে আমার বিরান অঞ্চল  

ভালোবাসার আঁচল ধোয়া প্ৰিয় হৃদয়ের সিঞ্চিত জল!


*১৬*

দূরে দিগন্তরেখায় গোধূলির লালিমা ম্লান হয়ে আসে

হীরক পোতাশ্রয়ে তোমাকে খুঁজছি সান্ধ্য বাতাসে!


সন্ধ্যা খুলে দিয়েছে গৃহবন্দী মানুষের ভ্রমণের উৎসমুখ

এই যে হঠাৎ করে নদী পেরিয়ে আসা 

                                  একেই হয়তো বলে প্রিয় সঙ্গসুখ!


ইলিশ নৌকায় বেজে ওঠে সন্ধ্যা আরতির ঘন্টা

নিবিড় সান্নিধ্যে বসে এদৃশ্য দেখে ভরাট,মনটা!


স্মৃতির প্রকোষ্ঠে জমে থাকা গল্পে গল্পে সময় করি পার

নিরভারণ আনন্দময় সন্ধ্যায় 

         খুঁজে পেলাম হারানো সব মনি-মুক্তার!


হে প্রিয় নদী- এখন অনেক রাত

আমার অনুভব ছুঁয়ে আছে 

            তোমার উষ্ণতা  জারিত হাত!


*১৭*

একাকী বিছানায় শূন্যতা দোল খায়,

                 এখন অনেক রাত...

বাইরে ঘনঘোর অন্ধকার আর অঝোর বৃষ্টিপাত!

এরকম তন্দ্রালু ঘোরের মধ্যে নদীর রিংটোন

জলজ কণ্ঠে শুনি সিক্ত হৃদয়ের মন কি বাত!


প্রিয় ভালোবাসার কথা শুনে 

                   আন্দোলিত হই আলো-অন্ধকারে 

তবুও কেন যে বিষণ্ন করে বৃষ্টিপতনের এই মৌতাত....

প্রবহমান ভাবনাগুলি বয়ে যায় কেবল অস্ত নদীর সুদূর পারে!


বৃষ্টি কি মুছে দিতে পারে ফেলে আসা জীবনের সব ব্যর্থতা?

তবুও কেন যে বিশ্বাস জাগায় নদীর সঙ্গে নিবিড় কথপকথন 

                      আর রাত্রির এই নির্জনতা!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code

Responsive Advertisement