Ad Code

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

উদাস বাউল

 



তাল নবমী


জন্মাষ্টমীর দুদিন আগে ভ্যাকসিন নিয়ে বাড়িশুদ্ধু লোক একসাথে এমন জ্বরে পড়লাম যে ভেবেই নিয়েছিলাম কৃষ্ণপ্রাপ্তি হয়ে গেল হয়তো। অতএব এবছর আর তাল ফুলুরীর পার্ট ছিলনা। সুস্থ হয়ে ওঠার পর থেকে মায়ের তো মন খুঁতখুঁত করছিলই, আমারও পেটের মধ্যে কেমন তালকানা বুজকুরি কাটছিল। শেষে গেল হপ্তায় মা বলেই বসলো- এবার আর তাল খাওয়া হল নি!

বোনের তাল-কাঁঠালের গন্ধে মাথা ধরে, তাই সে বই'য়ের মধ্যে মুখ গুঁজেই চশমাটা একটু নামিয়ে আড়চোখে দেখে ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল- তাতে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হল শুনি? বেশি তাল খেলে পেট খারাপ করে, জানো?

বোন ডাক্তারিতে চান্স না পেয়ে শেষমেশ ফিজিওলজি অনার্স নিয়ে ভর্তি হলেও, বাড়িতে তার হাবভাব একদম ডাক্তারের মতোই! ডাক্তারিতে নাকি ফিজিওলজি আর মেডিসিন এই দুটোই প্রধান বিষয়, তাই উনি হাফ ডাক্তার। মা'ও ওর কথার কোনও প্রতিবাদ করে না কখনও, এখনও মুখ কালো করে উঠে গেল। আমি বোনকে মুখ ভেংচিয়ে মনের দুঃখ মনেই চেপে লেখার খাতা'য় মন দিলাম। আমি মা'কে এমন জ্ঞান দিলে তাল ফুলুরীর বদলে মুখ ঝামটা খেতাম।

কাল রাতে খেতে বসে বাবা'ও বলে বসলো মাকে- কি গো বড় বৌ, এবার তো আর তাল ফুলুরী করলে নে?

মা হঠাৎ ভোলবদলে বলে বসলো- তা আমি কি করবো শুনি? উদো'টাকে তো কবে থেকে বলচি একটা তাল নিয়ে আয় তাল নিয়ে আয়, কথা কানে নিলে তো?

রুটিতে আলুভাজা গুঁজে মুখে পুরতে গিয়ে আলুটা হড়কে পরে গেলো। বোঝো ঠ্যালা, নিজের মা'ও এখন পাল্টিবাজির পলিটিক্স খেলে দিলো! আর যত দোষ নন্দ ঘোষ!

বাবা নিজের থালার দিকে তাকিয়ে খেতে খেতেই গম্ভীর গলায় আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল- তোমার যদি সময় না হয়, তো আমাকে বললেই পারো। মায়ের ইচ্ছে হয়েছে একটু মরসুমের ফল খাবে, সামান্য একটা তাল, তাও খাওয়াতে পারবে না, এমন সন্তান তুমি!

পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানি, এইসময়ে তর্ক করতে গেলে তাল'টা আমার পিঠেই পড়তে পারে। তাই খোঁটা'টা চুপচাপ হজম করে খাওয়া শেষ করে উঠে ঘরে গিয়ে দুলাল চন্দ্রের তাল মিছরির একটা ড্যালা মুখে পুরে চুষতে চুষতে শুয়ে পড়লাম। ঘুমের ঘোরে মনে হল আমি পুকুরপাড়ে ঝোপের মধ্যে কিছু খুঁজছি। হঠাৎ একদম জলের ধারে কাদার মধ্যে বড় কালো কুচকুচে ফুটবলের মতো কিছু একটা দেখতে পেয়ে ভয়ে ভয়ে চারপাশটা দেখে এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়াতেই দেখি সেটা বলের মতোই গড়াতে শুরু করেছে জলের দিকে। আমি সেটা ধরার জন্য পা ফেলতেই দেখি আমার পা কাদার মধ্যে গেঁথে যাচ্ছে, আমি এগোতে পাড়ছি না আর, কিন্তু সেটা গড়িয়েই চলেছে। আমি চিৎকার করে বলতে চাইছি "তাল নেবে জটি পিসীমা?" কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বেড়োচ্ছে না। এদিকে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে মা চেঁচাচ্ছে "উদো তোকে কবে থেকে বলছি তাল নিয়ে আয়, তাল নিয়ে আয়, কথা কানে যাচ্ছে না?" বোন চশমার মধ্যে থেকে চোখ পাকিয়ে চিৎকার করছে "তাল খেলে পেট খারাপ করবে দাদাভাই, একদম তাল কুড়োবি না, চলে আয়।" অন্যদিক থেকে বাবার ধমক শুনতে পাচ্ছি "মায়ের সামান্য একটু তাল খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে, তাও খাওয়াতে পারছো না! কুলাঙ্গার কোথাকার?"

ঘুমটা ভেঙে গেল। মেঘে মেঘে বেশ বেলা হয়েছে। স্বপ্ন দেখে মেজাজটা ঘেঁটে রয়েছে। উঠে দরজা খুলে বাইরে বেড়োতেই দেখি, এই সেরেছে, মা কাপে বোর্নভিটা গুলতে গুলতে উঠে আসছে! বোর্নভিটা আসলে বোনের ব্রেকফাস্ট, আমি শশা-মুড়ি দিয়ে দুধ চা খাই। তবে কোনও কোনও দিন মায়ের সোহাগ উথলে উঠলে মনে হয় "আহারে উদো, তুই বড্ড শুকিয়ে যাচ্ছিস, নে একটু 'বোনভিটা' খা, চাঙ্গা লাগবে।" এককাপ বোর্নভিটা খেলেই যে আমার স্বাস্থ্য ফিরে যাবে, এই বিশ্বাস মায়ের কোথা থেকে হল জানিনা, সম্ভবত টিভির বিজ্ঞাপনের মহিমা। তবে কোনও কোনও দিন মায়ের কোনও বিশেষ কাজ করানোর থাকলে মা আমাকে ঐ অখাদ্য খাইয়ে চাঙ্গা করবেই।

আমি ব্যাজার মুখে বাথরুম থেকে ফিরে বিছানায় এসে বসতেই মা কাপ'টা আমার হাতে ধরিয়ে বিগলিত গলায় বলল- কিছু মনে করিসনে উদো। তোর বোন বারণ করেছে বলে তাল আনা হয়নি শুনলে তোর বাবা আবার ওকেই দু'কথা শুনিয়ে দিত, জানিস তো তোর বাবাকে। তাই তোর নামেই চালিয়ে দিলুম, কি করবি বল, ও তো তোর ছোট বোনু হয়। যা বাবা এইবেলা বৃষ্টিটা একটু ধরেছে, বাজার থেকে তাল নিয়ে আয়। আজ "তাল নবমী", তোর বাবা তাল ফুলুরী না পেলে আবার তোকে খোঁটা শুনতে হবে। বেশ কালো হেঁড়ে দেখে তাল নিবি। দুটো নিবি, মনে থাকবে তো?

আমার মাথায় তখন টুংটাং করে দুটো শব্দ বেজে চলেছে- "তাল নবমী"। একে কি স্বপ্নদোষ বলবো না স্বপ্নাদেশ বলবো বুঝলাম না।

যাইহোক ছাতা বগলে করে সাইকেলটা বাগিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম বাজারে। সত্যিই একেবারে কামানের গোলার মতো একজোড়া তাল পেয়ে গেলাম বাজারে ঢুকতেই। যে বুড়ির থেকে তাল কিনলাম, কি আশ্চর্য, তাকেও যে সবাই 'জটি পিসী' বলেই ডাকি। বুড়ি হেব্বি খোচো, দরদাম করতে গেলেই একেবারে তালিবানী কায়দায় খ্যাঁকখ্যাঁক করে ওঠে। কিন্তু আজকে কেনো জানিনা আমায় দেখে ফোকলা দাঁতে হেসে বলল- খোকা তাল নিলে শুধু? নারকোল নিবেনি? ভালো নারকোল আছে, দ্যাখো… বলে বস্তা সরিয়ে দোমেলে নারকোলগুলো দেখাতেই আমার চোখ চকচক করে উঠলো। তাল-নারকোলের এই সহাবস্থান, সত্যিই কাকতালীয়।

লোভে পড়ে কিনে তো ফেললাম চারটি নারকোল, কিন্তু কথায় বলে লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। ঐ জগদ্দল পাথরের সাইজের দুটো তাল আর নারকোল নিয়ে ফেরার পথে ঝোড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টিতে এক হাতে ছাতা ধরে খানাখন্দে ভরা রাস্তায় সাইকেল চালাতে চালাতে ফুলুরীর বদলে চোখে সর্ষে ফুল দেখতে পেলাম।

বাড়ি এসে তাল দেখে তো মা বেজায় খুশি। এমন জাঁদরেল তাল কিনেছি বলে ভেবে বসলো ছেলে দারুণ তালেবর হয়েছে। সবে ঘরে ঢুকে কাগজখানা খুলেছি দেখি সত্যি সত্যিই অনুকূল ঠাকুর সৎসঙ্গের "শুভ তাল নবমী তিথি" জানিয়ে বিজ্ঞাপন। বুঝলাম বাবা কেন এতো তাল তাল করে উতলা হয়ে উঠেছে। ইদানিং ওই আখড়াতেই বুড়োগুলোর আড্ডা বসছে।

মা এসে বলল- উদো নারকোলগুলো একটু ভেঙে দিয়ে যা বাবা।

আমি কাটারি খুঁজে নারকোল ভাঙতে বসতেই আবার ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো। মা বলল- ইস আবার বৃষ্টি এলো, এদিকে কতো বেলা হয়ে গেছে! কখন রান্না করবো, কখন যে এসব করবো, কে জানে? ঐ জন্যই বলি সকাল সকাল উঠে বাজারটা করে এনে দিবি। তা না, বেলা পর্যন্ত পড়ে পড়ে মোষের মতো ঘুমোবি শুধু। আর আমার হয়েছে যত জ্বালা! কাল থেকে আবার হাতের ব্যথাটা বেড়েছে।

সত্যিই বাতের ব্যথায় মা হাত নাড়াতে পারেনা মাঝেমধ্যেই। তাহলে কি ফুলুরী মিস হয়ে যাবে? এদিকে পেটের দায় সবচে' বড় দায়। তাই আমি মুখে বিরক্তির ভাব দেখিয়ে বললাম- থাক তোমাকে আর এসব করতে হবে না। দাও দাও, আমি তাল চেঁছে দিচ্ছি, দেখি সরো।

ঐ ভীমতালগুলো উদ্ধার করতে বেলা গড়ালো। শেষ হতেই মা নারকোল মালাগুলো ধরে স্নেহমাখানো গলায় বলল- এগুলোও একটু কুড়ে দে উদো।

আমি নাক দিয়ে "হুঁৎ" করে একটা আওয়াজ বাড় করে নারকোল কুড়তে বসলাম। মনে মনে ভাবছি "এত্তো খাটছি মুখ বুজে, দেখি কটা ফুলুরী ভাগে জোটে।"

ততক্ষণে বোনের ঘর থেকে তীব্র এবং তীক্ষ্ণ চিৎকার ভেসে আসছে- আবার তাল আনা হয়েছে? এবাড়িতে তো টেকা দায় দেখছি! আমি কি তবে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো?

আমি রিফ্লেক্স অ্যাকশনের বসে মালা হাতে আপনমনেই বলে ফেলেছি- যা না, বাড়িতে একটু শান্তি ফিরবে…

ব্যস! মাইরি বলছি, আমার কথার পিচ'টা ফিসফিসের ওপরে ছিলোই না কোনোমতে। অন্য সময়ে চিৎকার করে করে ডাকলেও ম্যাডামের ইয়ারফোনভূষিত কানে কোনও কথা ঢোকেই না। আজ কি করে জানিনা শুনতে পেয়ে গেল, আর সঙ্গে সঙ্গে তীব্র প্রতিক্রিয়া- দাদাভাই, আজ তোর মাথায় যদি না ওই তাল ভেঙেছি তো দ্যাখ… বলেই একটু থেমে- উফঃ বাবারে কি উগ্র গন্ধ রে বাবা! মাথা একদম ধরিয়ে ছাড়লো।

সন্ধ্যে হতেই মা সব সাজিয়ে গুছিয়ে বসলো ফুলুরী ভাজতে। যদিও তার আগে দুঘন্টা ধরে ওই তাল ফেটিয়ে ফেটিয়ে আমারও হাত ব্যথা।

অনেকক্ষণ ধরেই রান্নাঘর থেকে ছ্যাঁকছোঁক আওয়াজ আসছে। বাবা বসার ঘরে অধৈর্য্য হয়ে বসে বসে ঠ্যাঙ নাচাচ্ছে, আর মাঝে মাঝে উঠে গিয়ে ফুলুরীর প্রগতি দেখে আসছে রান্নাঘরের দরজার বাইরে থেকে। বোন রাগ করে দুপুরে খায়নি বলে তার জন্য পিৎজা অর্ডার করা হয়েছে, সে মাঝে মাঝে ডেলিভারি বয়'কে ফোন করে দাঁত খিঁচোচ্ছে আসতে দেরি হচ্ছে বলে।

বাবা আর সহ্য করতে না পেরে আটটা নাগাদ গিয়ে বলল- কই গো, হল? দাও না, দুটো খাই।

মা হিমশীতল দৃষ্টিতে এমন ভাবে তাকালো, বাবা বলল- না না থাক, আমি বরং একটু গুড় পাই কিনা দেখি পচার দোকানে। এখনও তো আটটা বাজেনে, মনে হয় ঝাঁপ বন্ধ করেনে।

একটু পরে আমি রান্নাঘরে ঢুকে পেছন থেকে মায়ের গলা জড়িয়ে আদুরে গলায় বললাম- ও মাআআআ, একটা চেঁখে দেখি?

মা বেশ নরম গলায় বলল- দাঁড়া বাবা, এগুলো তোর দিদি'র জন্য ভাজছি, ও তাল ফুলুরী খেতে কত্তো ভালোবাসে বলতো? আগে তার বাড়িতে দিয়ে আয়, তারপর তোকে দিচ্ছি।

আমার তো শুনেই আক্কেল গুড়ুম! এখন আবার আধঘন্টা সাইকেল ঠেঙিয়ে দিদির বাড়ি যেতে হবে ফুলুরী দিতে! বললাম- মা এতো রাত্তির হয়ে গেছে তো, কাল গেলে হয় নে?

মা ভিজে গলায় বলে উঠলো- আগে তোর দিদি যখন ছিল, এসব কাজে ও'ই আমায় হাতে হাতে সব এগিয়ে দিতো। তখন ভাজা হলে বলতো সবার আগে ভাই'কে দাও মা। আর এখন তুই দিদির বাড়িতে দিতে যেতে পারবি নি বলে বাহানা দিচ্ছিস… বলে মা মুখে আঁচল চাপা দিলো।

ব্যস, মায়ের চোখের জল যে কত মারাত্মক গেম চেঞ্জার, সে আর বলতে হয় না। আমি রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে ফোন লাগালাম দিদি'কে। দিদি ফোন ধরেই উচ্ছ্বসিত গলায় বলল- তুই ফোন করে খুব ভালো করলি, আমিও তোকেই ফোন ঘোরাতে যাচ্ছিলাম। তোর জামাইবাবুকে পাঠাচ্ছি।

তাল ফুলুরীর গন্ধ এতো দূর থেকে পেয়ে গেলো নাকি রে বাবা! আমি সন্দিগ্ধ গলায় জিজ্ঞেস করলাম- কেন রে?

দিদি বলল- সে বলছি, তুই বল আগে কি বলছিলিস?

বললাম- মা তাল ফুলুরী পাঠাচ্ছে, আমি নিয়ে যাচ্ছি।

দিদি- থাক তোকে আর কষ্ট করে এতোটা সাইকেল নিয়ে আসতে হবে না। তোর জামাই বাবু যাচ্ছে ইলিশ মাছ নিয়ে। সর্ষে ইলিশ তো তোর ফেব্রিট? ও বাইকে করে টুক করে চলে যাবে, ওর হাতেই পাঠিয়ে দিস।

আমার কেন জানিনা হঠাৎ গলাটা বুজে এল, কোনোমতে বললাম- শোন না দিদি, আমিই যাচ্ছি। অনেকদিন তোকে দেখিনি রে।

দিদি মিষ্টি করে হেসে বলল- পাগোল কোথাকার। তাহলে আয় তাড়াতাড়ি। আর এখানেই খেয়ে যাবি… বলে ফোনটা রেখে দিল।

আমি একটু লোক দেখানো না-না করেছিলাম বটে, কিন্তু দিদি কিছুতেই শুনলো না, খাইয়েই ছাড়ল। ইলিশটা সত্যিই সরেস ছিল। শুধু ইলিশের তেল দিয়েই এত্তোটা ভাত মেরে দিলাম। তার আগে যদিও দিদির ভাগের থেকে কটা তাল ফুলুরীও সাঁটিয়ে দিয়েছি, দিদি'ই দিলো। পুরো চাকদুম টেস্ট, দারুণ হয়েছে। মচমচে অথচ নরম, একেবারে যাকে বলে ডিলিশাস।

দিদি টিফিন ক্যারিয়ারে করে বাড়ির জন্য সর্ষে ইলিশ দিয়ে দিয়েছে। বোন ইলিশের ডিমের পোকা, ওর জন্য ডিমওয়ালা পেটিগুলো আলাদা করে দিয়েছে।

ইলিশ নিয়ে ফেরার পথে সৎসঙ্গের আখড়ার পাশ দিয়ে সাইকেল চালাতে চালাতে বিভূতিভূষণের দিব্যি অনুকূল ঠাকুরকেও উইশ করে ফেললুম- হ্যাপি তাল নবমী।


(all the characters and events depicted are "original". any resemblance to any event, piece and person living or dead is purely intentional for the pen's sake)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code

Responsive Advertisement