*এলোকেশী*
নারী আপন মাধুর্যতায় মোহিনী,
পুরুষ তার অনুভবে গড়ে তোলে রূপসী সর্বজয়ীনি।
আগল খোলা বাতাস ধেয়ে আসে যখন
পূব পশ্চিম উত্তর কিংবা দক্ষিণে
মলিন ধূসর মনও সতেজ হযে ওঠে
তারি স্পর্শে।
শ্রদ্ধার মিশেলে স্থাপিত হয় যদি
বিপরীত মুখী সম্পর্ক,
রঙিন পৃথিবী আরো রঞ্জিত হবে
অবসান ঘটবে ক্লান্তময় জীবনের ।
*যাক যা আছে সব চলে*
অনাবিল আনন্দের ধারা ছুঁয়ে যায়
এখন তখন সর্বক্ষণ।
মানুষের আছে শক্তি
প্রকাশিত যা আত্মিক শুদ্ধিতায়,
অন্তর্ভেদী সুকর্মের মর্মস্পর্শী আবেদন
প্রতিহত হতে পারেনা অশুভের দ্বারায়।
মৃত্যু নামক কঠিন বিভিষিকাকে
জয় করেছে যে, সেই একমাত্র খুঁজে পায়
যাবতীয় আত্মসুখের সিঁড়ি গুলি।
মাটির আকর্ষণ চিরকালের ,
মুক্তি পায়নি কেউ এর অমোঘ টান থেকে,
কত সহনশীল কতই উদার
কতই মানানসই,
যার ভাবের ভিতরে একবার প্রবেশ করবে এই উপাদান গুলি,
সেই ভেসে যাবে অনন্ত সুখের সাগরে।
*কুশল*
ভালো থাকা যায় অল্পতে
খুশি হয়া যায় অপরকে দান করাতে,
সীমা নেই এর কিছু।
যে ভাবের অনুগামী তুমি
সেটাই হয়ে ওঠে পাওয়া না পাওয়ার হাতিয়ার।
পেলেই নিজের খুশিতে নিজেই মজে থাকা,
না পেলে আফসোস আর দোষারোপ করা ভাগ্যের।
চাঁদ দেখেই কেউ কল্পনার সিঁড়ি বেয়ে
সুখের মুক্ত আকাশে পাড়ি জমায়
কেউবা গাড়ি বাড়ি সম্পদের তাপে
সন্তুষ্ট ও আত্মপ্রসাদ লাভ করে জীবনের স্তরে স্তরে।
শূন্যতাই কারোর কাছে বাঁচার রসদ
কারোর কাছে তা হয়ে ওঠে হতাশার পাহাড়।
*বেড়ার এপাশে ওপাশে*
জনক জননী কত সোহাগে ভালোবেসে
পেতেছিলো সংসার।
সন্তান যা ছিল তাদের, আপন খুশিতে থাকবে তারা
ওদের স্নেহের নীড়ে।
সর্বক্ষণ গমগম করতে থাকবে
ঘরখানি
ওদের হাঁক ডাক হৈ চৈ এ।
সৃষ্টির সূচনায় বোধ থাকেনা কারোর
পুরিপূর্ণতা গড়ে ওঠে শিক্ষার আঙিনায়।
জানাবোঝার সব কিছু আয়ত্তে আসলেই
শুরু হয়ে যায় স্বার্থের টানাটানি।
ধর্মের মড়োকে বিকিয়ে দেয়
মানবিকতা, উদারতার শাখাপ্রশাখা গুলি।
যারা ছিল হৃদয়ের বন্ধনে যুক্ত
বিচ্ছেদ ঘটে বেড়া তারে।
এপারের কান্না ওপরের বুকে বাজে
মিলতে পারেনা তবুও তারা
একের সঙ্গে অন্যে।
*অন্তর চেতন*
আঁখি খোলা থাকে দেখার জন্য
যাতে হোঁচট খেতে না হয়,
রাস্তা যতই মসৃন হোকনা কেন,
জানা থাকেনা বিপদের আগাম বার্তা।
জাগ্রত বিবেক কেবল স্বার্থের সংরক্ষক হবে
তা কিন্তু নয়,
ভালো মন্দের, সঠিক বেঠিক,
ন্যায় অন্যায়ের
ফারাক টাও তাকে নির্দেশ দিতে হবে।
পাপ পুণ্যের গুদামঘরের দেখভালের দায়িত্বযে,
সচেতন বিবেকের।
অন্ধ যে, সে সচেতন ক্ষণে ক্ষণে,
ভানের অন্ধই অসচেতন পদে পদে।
নির্মীয়মান প্রাসাদ ভেঙে যায় কতো
গলদ উপাদন ও পর্যবেক্ষণে।
*অসংখ্য পথ খোলা আছে*
রুদ্ধ করে দিতে পারেনা কেউ
সঠিক পথ,
দিতে পারে নিছক তার সহজ যাত্রাকে অসহজ করে দিতে।
জানেনা, একবার চেতন জেগেছে যার
কোনো না কোনো রাস্তা খুঁজে নেবে সে,
যার সাহায্যে পৌঁছে যাবে কাঙ্কিত ঠিকানাতে।
মানুষ অবিনশ্বর নয় ;নয় সে মহান একক শক্তিমান,
ভঙ্গুর থেকেও ভঙ্গুর; হীন থেকেও হীনতর।
আমি সঠিক মানতেই হবে তোমাকে
আমারই নীতি নির্দেশ,
এই ভাবের অনুসারী যারা
খসে পড়বে নিজেরাই উল্কার মতো মাটির উপর চিরতরে।
*কাঞ্চন কামিনী*
যথার্থ সম্পদের অধিকারী হওয়া কি যায়?
স্রেফ ভুল মনের।
একার রমরমা হবে বাজার
চাইলেই হাতের মুঠোয় বিশ্ব সংসার,
পদানত হবে সবাই এক লহমায়।
দুমিনিটের পৃথিবীতে খুবই অকিঞ্চিতকর,
শ্যামের বাঁশি বাজলেই
হাজির হতে হবে তক্ষুনি।
অর্জিত যা ছিল পড়ে থাকবে তা,
একান্ত অপারগ অবহেলায়।
*ক্লান্ত পায়ে*
শরীর সতেজ যখন
ফুরফুরে থাকে মন,
বয়সের ফারাকে ,দেহ ও মন
বিষন্ন তখন।
খবর পাবে তুমি আপন অনুভবে,
সময় অসময় দুটোই পরিচয় ঘটে
ভাব ও অভাবে।
বোঝার বয়েস হয়েছে অনেকটাই,
এখন বিশ্লেষণের বিষয়,
কেমন ফল ফলবে তার পরখ
নিজের কাছেই।
*উৎসব*
পরোব হোক তোমার
উৎসব তোমার আমার সবার।
ওই যে নীল আকাশ ভরে আছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘের চাদরে
সেও কি মেতে থাকেনা এই তিনটে দিনে?
সারিবদ্ধ গাছ গাছালি গুলো ! ওরাও তো হাসছে
নিজেদের খুশি ভাগ করে নিচ্ছে
তামাম সূর্য্যের তাপের সাথে।
কোনো ভেদাভেদ ছাড়াই পূবালী বাতাস বয়ে যায়
রাম রহিমের পাড়ায়।
ঢাকির বাজনায় নরেন মাতে যেমন
আব্বাস দর্জির কল চালায়
আপন মাদকতায়।
প্রকৃতির সঙ্গে ধর্মের এই একাত্মকরণে হৃদয় মথিত হয়
এক অপার্থিব আনন্দে।
শতধারায় শতরূপে মুগ্ধ হই
এই মায়াবী বাংলার আঁচলে জড়িয়ে আছি যারা।
বিভেদ কেমনে করবে তুমি
প্রকৃতি তো ছেদ করবেনা আমাকে তোমাকে,
বারবার চেতন ফেরাতে চায়
বধির মূক আমাদেরকে।
*আবেশীত*
সুখ এসে ধরা দেয় কখনো কখনো,
বিমর্ষ একঘেয়েমির অবসান ঘটে
একটু প্রশান্তিময় পরিবেশে।
এও এক আত্মপ্রসাদ লাভ যা,
সহস্র ঘাত প্রতিঘাত কে শান্ত করে
সুমন্নত করে ভাব ও অনুভবে।
*চাঁদ চেয়ে রয়*
বাস্তবের দরজায় কৃতিম আলো করে ঝিকিমিকি,
তারি ছটায় প্রকৃতির আনন্দউৎসব ,মিলিয়ে যায়,
জোৎস্নাময় আকাশের গায়।
ভাবুক গৃহী কবি সব
মিলেমিশে হয় একাকার,
কেউ দেখে চাঁদ কেউবা রচে যায় ধান্দার ফাঁদ।
একই আকাশ কখনো ঢেকে থাকে মেঘে
কখনোবা চাঁদের আলোর মায়ায়
হাসি খুশি বেলায় অকাতরে।
ওযে, লয় ক্ষয় হীন,
চির অমলিন।
*কাকের স্বরূপ*
কোকিল বসন্তে আসে সুমধুর কন্ঠের জাদু নিয়ে,
মোহিত হই আপামর সবাই।
যে কালে হয় শুধু জীবনের গান গাওয়া,
যৌবন কেবল করে আসা যাওয়া।
সেটাই কোকিলের মান সেটাই তার সম্মান,
শত সুন্দর হয়েও কেউ করেনা কাকের গুণগান।
স্থান নেই তার মর্যাদার,
চিরকাল পেয়ে থাকে সবার অনাদর।
পায় যত নোংরা আবর্জনা করে তা ঘাঁটাঘাঁটি,
পরিষ্কার যা কিছু সবটাই সে করে অবজ্ঞা অবহেলা।
মানুষও এমন আছে কিছু
সুন্দর দেহের কদর্য্য মনের অধিকারী।
সুন্দরের প্রকাশ সুন্দর ভাবনায় প্রকাশিত,
অন্যথায় যা কিছু সবই কাকের ন্যায়।
*একটু উদারতা*
কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে ছোটো ভাইটি
একদিন নিয়ে চলো দাদা মায়ের দর্শনে,
অপারক দাদার বুক বিদীর্ণ হয়ে যায় করুন আর্তনাদে।
বিগত দিনগুলি কাটিয়েছে কতই আনন্দে
হিসাব নেই তার লেখাজোকা,
বাবার হাত ধরে ঘুরছে এ প্যান্ডেল সে প্যান্ডেলে।
বাবা গত হয়েছে কয়েক বছর আগে
মারণ ব্যাধি ক্যান্সারে।
কোনো রকম কাজ জুটিয়েছিলো কোনো এক দোকানে,
পেতো যা চলে যেত মা দাদা ভাইয়ের সংসার।
এমনি দিন চলেনা একই ভাবে,
বিঘ্ন ঘটালো যাবতীয় সুখের অনুভূতি
অতি মারি করোনা সংঘাতে।
কাজ হারা সমাজ ছাড়া তাই ওরা,
বেদনার পাহাড় জমে থাকে
অভাবের কঠিন বাস্তবের মাটিতে।
ভাই অবুঝ জানবে কেমন করে?
দাদা নিঃস্ব অসহায় অক্ষম এই ঝলমলে দুনিয়ায়।
চতুর দিকে এত আলোর রোশনাই,
তবুও আলোকিত নয় ওই
নিরন্ন মলিন মানুষগুলোর অন্তর সকল।
*ক্ষুদ্রের মধ্যে বৃহত্বের বীজ*
বিন্দু বিন্দু বারিকণা সৃষ্টি করে সিন্ধু,আর
এক বিন্দু রক্তকণায় জন্মনেয়
আগামী দিনের বংশধারা।
ছোটো থাকলে বড়োর মহিমা,
বড়ো হয়েছে তো ছোটোর হাতধরে।
ভূবনের যা কিছু সৃষ্টি সবটাই
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুকেন্দ্রিক,
প্রতিটি প্রাণীকূল অনুধাবন করে এর মর্মার্থ,
ব্যাতিক্রম শুধু মানবকূল।
শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পেয়েও
অবিবেচক অনুধাবনে।
যে ক্ষুদ্র মণি দিয়ে চোখ স্বার্থক করে,
ধরনীর প্রতিটি সৃষ্টিকে দেখে,
এই বৃহৎ দেহ কি পারে ?এতটা
স্বার্থক করতে।
কায়িক শ্রম আর যৌবিক প্রক্রিয়ার এ এক অনুপম সৃষ্টি,
ভূমিকা এখানেই এটাই মুখ্য দেহের।
*নবিকরণ*
ছিল একসাথে জন্মের সূত্র মেনে,
ছাড়া ছাড়ি হয়েগেল সামান্য মনোমালিন্যে।
রক্তের ধারা ছেদ বিচ্ছেদের পারওয়া করেনা
ও অবাদ স্বাধীনচেতা আকাশের মতো,
বয়ে যাবে সাগরের জলের ধারায়।
আমরা মানুষ ঠিক ভুল ভালো মন্দের সংমিশ্রনে লালিত পালিত,
এটাই প্রবাহমান অনন্তকাল ধরে।
অনুযোগের মাত্রা যতই কমতে থাকবে ,সম্পর্কের বন্ধন ততই সমৃদ্ধ ও পোক্ত হবে।
ঝালিয়ে নিই না কেনো? মানবিক উদারতার আগুনে
যা কিছু আছে মহত্তর গুণগুলি।
*সুতো ছেঁড়া ঘুড়ি*
কতই তার আধিপত্য
সমস্ত আকাশ জুড়ে,
লাটাই যে ধরে আছে অন্যজনে।
যখন যে রকম চাইবে ওড়াতে,
তেমনি উড়তে হবে তাকে
হাতের জাদুতে।
আজ তুমি চলছো কারোর ইশারায়
সাহায্য সহতায়,
নিশ্চিন্ত নিরুদ্বেগ সময়।
যেদিন পাশ থেকে চলে যাবে
প্রকৃতির নিয়ম মেনে,
সুতো ছেঁড়া ঘুড়ির দশা
দেখা দেবে তেমন,
হতাশাময় বাঁধনহীন জীবন।
*মলিন মায়া*
ওই যে উঁচু পাহাড়টি
দাঁড়িয়ে আছে আকাশের দিকে মাথা তুলে,
কোনো চাওয়ার নেই কিছুতার কারোর থেকে।
জন্মের পর হতে যখন ছোটো ছিল সে,
কেবল তাকিয়ে থাকতো পাশের বড়ো পাহাড়টির দিকে,
কবে এমনি হবে সেও।
বয়সের দাবী পূরণ করে হতে পেরেছে সে আজ
অনুরূপ বরিষ্ঠের মতো।
ওকেও তাকিয়ে দেখে অনুজ প্রতিম যারা আছে।
মলিন ভূষণে একদিন উভয়ে চলে যাবে
ধরনীর মায়া কাটিয়ে।
প্রবল শূন্যতা ঘিরে রাখবে দুজনকে,
ওরি বৃত্তে ঘুরবে অনন্তকাল ধরে।
2 মন্তব্যসমূহ
Kobir protita kobita monomugdhokor......!!!!! Hardik pritimoy suveccha kobi ke....!!!!! Emon vabei likhun ...... korunamoy r kache prathona kori ...onr korunar bari dhara jeno sb somy kobir upor borsito hoy .......🙏
উত্তরমুছুনঅপূর্ব সুন্দর প্রতি কবিতাগুলি. লেখার ছন্দ আর ভাবনা অতুলনীয়. বাস্তব জীবনের মহিমা আর সত্যের বিশ্লেষন জাগায় প্রেরণা এবং অন্তর্ভরা প্রশ্নের একান্ত উত্তর জাগায় এই কবিতার মাধ্যমে. এভাবেই জন্মায় প্রগতির পথ এবং তারমধ্যে প্রস্পুঠিত হয় অন্তরের গভীর পরিচয় আর বহনকারী ওই ঈশ্বরের আশীর্বাদ.
উত্তরমুছুন