Ad Code

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

মৌমিতা ঘোষ



গোলাপী ক্যানভাস 

খুব কষ্ট হলে
তোমার কথা ভাবি
তোমার গালে পিছলে পড়া
আলোর কথা ভাবি।
অথচ সমাজ সংসার
 আমার মাথায় কখনো আসেনা।
প্রতিটি রাতে
আমার দুহাতে ধরা 
তোমার ছলোছলো মুখ
দেখতে পাই। ভরিয়ে রাখে।
অথচ তুমি
অন্য কারো জন্য ছলছল ছিলে।
আজো তুমি টলমল
অন্য কারো জন্য।
তবু দস্যুরাজার মতো 
প্রতি স্বপ্নে চুরি করি চুমু
হাওয়ায় ডানা মেলে দুটি আকাশ
কথা আর হাসির শব্দে
ঢেকে যায় নিরন্তর গ্লানি।
প্রতিটি দুঃখ রাতে
 তুমি আমার রাণী
ঝড় ঝঞ্ঝা মেখে নিয়ে
তোমার কাছে প্রতি রাতে পৌঁছাই
ডিঙি নৌকো নিয়ে 
সমুদ্র লঙ্ঘনের প্রচেষ্টায়।
জলরেখায় আঁকি তোমার মুখ।
বলি: 'ধ্বংস করে দাও।'

অথবা মেলো চোখ আরেকটিবার করপুটে
সে দৃষ্টিতে দু এক ফোঁটা বৃষ্টিদানা 
আমার নামে ঝরুক।

সাড়া দাও। সে সাড়ায়
টাপুর টুপুর শব্দ হোক 
বা শিরায় শিরায় বাজুক রিমিকি ঝিমিকি।

কখনো সবটা দিতে নেই। নিঃস্ব করতে নেই নিজেকে। ধীরে ধীরে নিজের চারপাশটা অচেনা হতে শুরু করে তার পর। চেনা ঠোঁটের গন্ধ, যত্নে রাখা তিল, ভুরুর ভাঁজ,বা চশমার ফ্রেমের আড়ালের হাসি আবছা হতে থাকে। অনেক নতুন দৃশ্য এসে ভুলিয়ে দেয় পুরোন দৃশ্যপট। সেখানে তোমার পাশে আমি নেই, সাধের কেনা গোলাপী নেলপালিশের শিশি ব্যর্থ হয়। তোমার আঙুলে তখন অন্য কেউ,ভোরের কাকলিতে অন্য সুর , নতুন গানের তান।

তারচেয়ে আপন বলে থাক কিছুটা। তার মধ্যে চেনা দুঃখ জাল, চেনা মায়াবিলাস। ভোরের সূর্যের জড়ানো কুসুম কুসুম মায়া ঘিরে থাকুক সে আত্মস্থ সংবাদে।

ততটুকুই তোমাকে দেবো, যতটুকু  দিলে শেষটুকু অবধি চুমুকে শেষ করার জন্য তুমি ফিরে আসবে।

তুমি কি তেমন করে কখনো আমায় বুঝেছ?
যদি বুঝতে তবে
পাখি হতে হতো।
গান গেয়ে ওইই উঁচুতে
ঝাপটে মরতে হতো ডানা।

তুমি কি এ চোখ পড়েছ কখনো?
যদি পড়তে
তবে দুঃখের রঙে
ছবি আঁকতে পারতে মুক্তোর।


তবে শেষ হওয়া ছাই
কীভাবে পাক খেয়ে
খুঁজে বেড়ায় নিখোঁজ ঘরবাড়ি
তার খবর পেতে

তুমি খোঁজ রাখোনি হৃদয়ের
তাই ঈশ্বর বহুদিন নিখোঁজ, কমলিনী।

এসো না। ছায়াপথে রাখা আছে কিছু মরমে মরে থাকা ইচ্ছে, ওদের অন্ধকারে থাকতে দাও। ভালোবাসা চার আনা আট আনায় মাপা ডাল নয় ,তার জন্য হিসেব করে পা ফেলতে পারিনি বলে আজন্মের অভিশাপ আমার। কোথাও লেখা নেই আমি চার কদম এগোলে তুমি দুকদম পিছোতে পারবে না। কোথাও লেখা নেই, চোখের জলের রঙ দিয়ে টিপ পরা যায় না। তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে চাই বললেই কি রাখা যায়? ভালোবাসা আর অধিকার কি এক ? ভালোবাসা তো উজাড় হওয়ার জন্য। অধিকার বরাবর বিরক্তির কারণ এ কথা আমি কখনো ভুলিনি কমলিনী। আমার দিনের মধ্যিখানটিতে তোমাকে বসিয়ে ঘট পাতি।ধুনো জ্বালি। উপড়ে রাখি চোখের মণি তোমার হাতের তালুতে।  রাতের যখন নেশা চড়ে খুব, জ্যোৎস্নায় তুমি সরে সরে যাও। কঠিন আঙুল নেড়ে জানাও তফাৎটুকু থাক।

তফাৎ টুকু আছে কমলিনী। তাকে অতিক্রম করার স্পর্ধা কি কখনো দেখাতে পারেনা ভিক্ষুণি? শুধু করজোড়ে দাঁড়ানো তার ভবিতব্য?

এসো না।অত রূপ ভিখারির সহ্য হবে না। চাঁদ হাতের তালুতে রাখা আমার মধ্যরাতের উন্মাদনা হোক।

মন রাখবার খেলাটুকু ছিল
নিস্পৃহ হতে পারিনি।
তোর হাতে ছুটি যখনই দিয়েছি
জিতে গেছি শুধু হারিনি।

শরীর ছুঁলেই রাতের কাহন
পর্দারা কাঁপে তিরতির
সারাটা দেওয়ালে জোনাকি বিছানো
প্রতিটি চুমোয় শিরশির

আমরাই জানি কতটুকু ছোঁয়া
পাগলামি বয়ে আনে
তুই ছুঁয়ে দিলে বাহারি কাঁটায়
খোঁপা সাজে আনমনে।

আমরা দুজনে অনেক হেঁটেছি
কেঁদেছি ও পাশাপাশি।
চলে গিয়ে ফের ফিরে আসি শুধু
বলে ফেলি ভালোবাসি।।

কী করে বোঝাই তোমাকে,
কতটা অসহায় এই ভালোবাসা নিয়ে।
নিজেকে নিজের আশ্বাসবাণী
ভোরের বাতাসে প্রলাপ হয়ে বাজে।
ঠিক তুমি তখন ভোরের আলাপে
ফাঁক করো দু'ঠোঁট...
সোহিনী তে বাজে সোহাগ।
তুমি বোঝনি কমলিনী
এ জীবনে তোমার তোলা তানের মাঝে
নিজেকে গুঁজে দেওয়া ছাড়া
ঠিকঠাক কোন কাজই 
করে উঠতে পারিনি।
রাখালিয়া বাঁশি নিঃস্ব করেনি আমাকে কখনো
যেমন করে তুমি এক দুকলি
গাইলে, নচ্ছাড় বাতাস পাক খেয়ে ওঠে।
এ জীবনে তেমন কিছুই
লেখা হয়ে ওঠেনি কমলিনী
আমার জ্বরের কপালে
তোমার জলপট্টির আশ্বাস ছাড়া।
একবার তাকাও
চোখ মেলো, ঠিক সুরটি লাগুক প্রাণে
একবার উদাস বাউলানিও
অবলম্বন শব্দের মানে বুঝুক।

এইটুকু তো চাওয়া।
তুমি তো তেমন কৃপণ না...

 ৭
গানের মধ্যে তোমাকে চিনেছি।ছিনিয়ে এনেছি আলোক রশ্মি অবুঝ বালিকার হাসির মতো। যেখানে বসত গড়েছি কমলিনী, কেবল ই অপরিচিতের ভিড়, একটিও মুখ আপন বলে স্বস্তি দেয়না।যে পৃথিবী আমার তার চারপাশে অস্বস্তিকর নির্মম সকলে। তবু সূর্য তো রোজই ওঠে নিয়ম করে‌ সকলের জন্যই। আকাশে বাজে সুরের সানাই। রোজ এক্কেবারে কাক ভোরে সে সানাই শুনি আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে। গাছেরাও গান গেয়ে ওঠে কমলিনী, তুমি যখন রেওয়াজ করো। পাখিরা ডানা ঝটপটায়, যেন আমার ই অতৃপ্তি তোমাকে জানার, আরো নিবিড় করে জানার। তোমার কাছে কিছু চাওয়ার নেই বলে রোজ জল চোখে তোমার ছবির দিকে তাকিয়ে থাকি অপলক। ঠিক সেইসময় ঘন জঙ্গলের ভিতর বৃষ্টি হয় কোথাও, উথলে ওঠে সমুদ্র কোন উপকূলে, আমার শব্দ সরেনা কিছুতেই। জানু পেতে বসে আছি। 
অপেক্ষারা অপেশাদার হলেও জেদি। সে তোমাকে' তিন প্রহরের বিল' না দেখিয়ে মুক্তি নেবেনা।
সে তোমার নামে লিখে দেবে অনন্ত ছুটি।
জীবনের বহুবছর কেটে গেলেও কেউ না কেউ থাকেই কথা রাখার মতো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

12 মন্তব্যসমূহ

  1. খুবই ভাল লেগেছে... মন ছুঁয়ে গেল...

    উত্তরমুছুন
  2. আহা। হে রাই কমল! মাকড়সার মায়া জালে ছত্রে ছত্রে যে আধুনিক রাধার মায়া পংক্তি গোলাপী ক্যানভাসে আঁকলে, সে জালেই অন্তর্লীন হবে শত বীজ তার সৃষ্টির উল্লাসে।

    উত্তরমুছুন
  3. ভালো লাগল। বিশেষত দ্বিতীয় কবিতা টি

    উত্তরমুছুন
  4. সুন্দর ঝক্ঝকে লেখা।মন ভালো করে দেওয়ার জন‍্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন

Ad Code

Responsive Advertisement